দল হিসেবে মেসি আসার পর পিএসজিরও খুব একটা উন্নতি হয়নি। ফরাসি লিগ ওয়ানের শিরোপা জিতলেও ফের একবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতার স্বপ্ন অধরা থেকে গেছে প্যারিসিয়ানদের।
দলের পাশাপাশি মেসির নিজের পারফরম্যান্সের কোন উন্নতি হয় নি। বার্সেলোনার জার্সিতে তিনি যতটা বিধ্বংসী ও প্রতিপক্ষের জন্য যতটা আতঙ্ক ছিলেন, পিএসজিতে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না।
মেসির এই ফর্মহীনতার পেছনের কারণগুলো অনুসন্ধান করেছে বার্সেলোনা-ভিত্তিক ‘এমবিপি স্কুল অব কোচেস’ নামে কোচদের প্রশিক্ষণের জন্য বিখ্যাত এক প্রতিষ্ঠান।
তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে মূলত ৪টি কারণে মেসির এমন নিষ্প্রভ চেহারা। ৪টি কারণ নিন্মে…
১. পিএসজির আক্রমণভাগে মেসির নতুন ভূমিকায় নামা। পচেত্তিনোর ফরম্যাশনে মেসির ভূমিকা মূলত রাইট উইঙ্গারের। তবে মূলত প্লে-মেকার হিসেবেই তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে বেশি।
দলের আক্রমণের বিল্ড-আপে বেশি দায়িত্ব পালন করার কারণে মেসির গোল করার হার কমে গেছে। অন্যদিকে বার্সায় তাকে ঘিরেই আক্রমণ সাজানো হতো।
২. মেসি যে মানের খেলোয়াড় পিএসজি সেই মানের দল কি না সেই ব্যাপারটাকে। দল হিসেবে পিএসজি যেভাবে খেলে অভ্যস্ত, বার্সার ধরন তার চেয়ে একেবারেই আলাদা।
ফলে মেসির ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যদিও পিএসজিতে বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড় আছেন এবং বল দখলেও তারা প্রায়ই এগিয়ে থাকে। আর পিএসজির খেলার ধরন হলো ডিফেন্স থেকে আক্রমণে উঠে আসা।
৩. পিএসজির খেলার ধরনে এমবাপ্পের প্রভাব। ফরাসি ফরোয়ার্ডের দুরন্ত গতিময় ফুটবল পিএসজির এখনকার দলটির মূল চালিকাশক্তি। এর আগে একইরকম প্রতিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বার্সায় মেসি এবং নেইমার, কিংবা রিয়াল মাদ্রিদে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও করিম বেনজেমার ক্ষেত্রে। দলে যদি সেরা ফর্মে থাকে, তাহলে তার ছায়ায় বাকিরা ঢাকা পড়ে যায়।
এমনকি এ কারণে অনেক প্রতিভাধর খেলোয়াড়ের সামর্থ্যও ঢাকা পড়ে যায়। নেইমার যেমন মেসির ছায়া থেকে বের হওয়ার লক্ষ্যে পিএসজিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তবে মেসি ধীরে ধীরে দলে নিজের ভূমিকা বুঝতে শুরু করেছেন। এই মৌসুমে ১৩টি অ্যাসিস্ট যার প্রমাণ।
৪. ফুটবলে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে; মেসির মতো ‘বুড়ো’ খেলোয়াড়দের জন্য তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুটবল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শরীরী খেলা হয়ে উঠেছে।
প্রচণ্ড গতি আর আগ্রাসী ফুটবল খেলা এখন ৩৪ বছর বয়সী মেসির জন্য বেশ কঠিন। ফলে পিএসজির আক্রমণভাগে তার ভূমিকা কমতে শুরু করছে। আগের মতো আক্রমণের কেন্দ্রস্থলে আর দেখা যাচ্ছে না তাকে। সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছেন এমবাপ্পে বা নেইমারের মতো তুলনামূলক তরুণ খেলোয়াড়রা।